SRI SRI BIJOY KRISHNA SADHAN ASHRAM ( Durganagar, Karimganj, Assam )

দুর্গানগর আশ্রমের কথা

শ্রী শ্রী ঠাকুরের অন্তর মহৎপ্রাণ শ্রীহট্টের করিমগঞ্জ বাসীদের জন্য কাঁদত । তিনি বলতেন এই অঞ্চলের মানুষেরা বড় দরিদ্র , এদের জন্য সুন্দর আশ্রম গড়ে উঠলে আমি আনন্দিত হবো । যে কারণে ঠাকুরজী নরেন্দ্রপুর আশ্রম এ কাজ চলাকালীন আসাম ও করিমগঞ্জে প্রায়ই যেতেন এবং চিঠিতে কাজ করার প্রয়োজনীয় নির্দেশ পাঠাতেন। এ সময় তিনি শ্রীহট্টের করিমগঞ্জে আশ্রমের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন অন্তরে ।  তিনি এক ভক্তের মাধ্যমে খবর পেলেন করিমগঞ্জের নিকটে দুর্গানগর আশ্রম করার উপযুক্ত সুবিস্তৃত কয়েক একর জমির প্লট ব্যাংকের কাছে 25000 টাকা ঋণের দায়ে আবদ্ধ আছে ও বিক্রয় হবে। ঠাকুরজি কলকাতায় ফিরে অমিয় চৌধুরীকে উক্ত খবর জানালেন। অমিয় চৌধুরী বাড়ি ফিরে তাঁর সহধর্মিণী শ্রীমতি জ্যোতি চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলেন তাঁর আলমারিতে কত টাকা আছে ? শ্রদ্ধেয়া জ্যোতিদি টাকা গুনে দেখেন ঠিক 25000 টাকা ই আছে । পরের দিনই অমিয় চৌধুরী  ওই টাকা শ্রী শ্রী ঠাকুরের হাতে তুলে দেন । শ্রী শ্রী ঠাকুরজী জমি কেনার জন্য ওই টাকা ব্রহ্মচারী অমরানন্দ ভট্টাচার্যের মারফত করিমগঞ্জে পাঠিয়ে দেন এবং ওই টাকাতেই দুর্গানগর আশ্রম এর দলিল সম্পাদিত হয়। এ এক আশ্চর্য ঘটনা, টাকার ব্যবস্থা গোস্বামী প্রভু পূর্বেই করে রেখেছিলেন । বেশিও নয় কমও নয় । 1963 সালে দুর্গানগর আশ্রম এর জমি কেনা হয়। গোস্বামী প্রভুর ইচ্ছা সফল করতে ঝড়ের দিনে পাখির মত ছোটাছুটি করেছেন সুদূর কলকাতা থেকে আসাম, আসাম থেকে করিমগঞ্জ। জীবনের প্রতিটি যন্ত্রণার প্রহরকে রূপ দিয়েছেন আনন্দের রুপকল্পে। শ্রী পরমানন্দ ছিলেন অত্যন্ত প্রচারবিমুখ , মানবদরদী  ও আশ্রিত বৎসল । এই করুণাঘন তনুধারির চরণে আমাদের প্রণতিপাত । 1980 সালের 21 শে জুন কাছাড়ের অন্তর্গত করিমগঞ্জে মাত্র 65 বছর বয়সে তিনি অপ্রকট হন এবং তাঁর দেহ দুর্গানগর আশ্রমে সমাধিস্থ হয় । ঠাকুরজীর লীলা-সংবরণের পর দুর্গানগরে সুন্দর আশ্রম, গোস্বামী প্রভুর মন্দির মন্দির গড়ে উঠেছে ওই অঞ্চলের ভক্তদের ঐকান্তিক আগ্রহে । পূর্বাঞ্চলের দেবস্থানের অভাবও হয় নিরসন ।

দুর্গানগর চা-বাগানে 12000  একর ( 3600 বিঘা) জমি ঠাকুরজী কিনেছিলেন ।আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্গানগর আশ্রম গড়ার কাজ শুরু হলো 1978 ইংরেজি সালের নভেম্বর মাস থেকে। ইংরেজি 13.11.78..,  ঠাকুরজি সুদর্শনদা, এবং আরো কাউকে কাউকে নিয়ে দুর্গানগরে গেলেন। কোথায় কি তৈরি হবে , তার একটা পরিকাঠামো করে নিলেন । 9.12.78.. তারিখে শ্রী শ্রী ঠাকুরজীর নির্দেশে সকাল 6 টা 30 মিনিটে পুষ্করিণী খনন শুরু হলো। এরপর ঠাকুরজি ফিরে গেলেন গৌহাটি , সেখান থেকে নরেন্দ্রপুর। তখন সব জায়গায় কাজ চলছে। দুর্গানগরে ঠাকুরজীর নির্দেশিত জায়গায় শ্রীমন্দির নাট-মন্দির , সভা কুটির, অতিথিশালা এবং ঠাকুরের ভজন কুটিরের কাটা হলো । এরপর 1.3.79 ইংরেজি তারিখে তিনটি জায়গায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হলো । ঠাকুরের ভজন কুটির, সভাগৃহ এবং অতিথিশালা । 5.3.79 তারিখে শ্রী মন্দির ও মহিলা আশ্রমের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয় । 9.6.92 তারিখে দুর্গানগর আশ্রম এ অনুষ্ঠিত এক সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হলো যে দুর্গানগর আশ্রমে 1993 সালের মধ্যে শ্রীবিগ্রহ ও শ্রী মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হবে। অবশেষে সমস্ত প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে 20 শে বৈশাখ শুক্রবার , চৌদ্দশ তিন বঙ্গাব্দ (3.5.1996) শ্রী মন্দির ও বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার দিন নির্ধারিত হলো। এর আগের দিন অর্থাৎ 19শে বৈশাখ বৃহস্পতিবার কীর্তন সহ বিরাট শোভাযাত্রা করে ভক্তবৃন্দ সুধাদার রায়নগরের বাড়ি থেকে রওনা হলেন দুর্গনগরে। শোভাযাত্রা করিমগঞ্জ থেকে যখন নিলাম বাজারে গিয়ে পৌছালো , তখন সকাল 10:30 নিলাম বাজার এলাকার তরুণ-তরুণী অনেক ভক্ত এই শোভাযাত্রায় যোগ দিয়ে দুর্গানগর  আসেন এবং তাঁরা পায়ে হেঁটে এই স্থান পরিক্রমা করেন।

শ্রী শ্রী ঠাকুর দুর্গানগর নির্মাণে কত বড় স্বপ্ন দেখেছিলেন , সে বিষয়ে তিনি এক শিষ্যকে পত্রে লিখেছেন….. পূর্বাঞ্চলে গোস্বামী প্রভুর আদর্শকে আশ্রয় করে একটি অসাম্প্রদায়িক আশ্রম গড়ে উঠুক — সেখান থেকে সকল সম্প্রদায়ের সাধু-সন্ন্যাসী এবং সংসার বিরক্ত বৃদ্ধগন স্বাধীনভাবে সাধন-ভজনের সুযোগ পাবেন । এছাড়া মহিলাদের স্বতন্ত্র একটি আশ্রম হবে । সেখানে থাকবেন অনাথ মহিলারা। একটি বিদ্যালয় হবে , তাতে আট বছর থেকে ষোলো বছরের মেয়েরা সনাতন ভারতীয় আদসর্শ শিক্ষা লাভ করবে । গ্রামবাসীদের জন্য থাকবে কৃষিবিদ্যা ও গোপালন ব্যবস্থা । আদর্শ কয়েকটি পল্লী ও গঠন করতে চাই । আপনারা সকলে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে নিশ্চয়ই ভগবান আপনাদের সহায় হবেন ।

                           ইতি নিত্য শুভাকাঙ্ক্ষী শ্রী পরমানন্দ