SRI SRI BIJOY KRISHNA SADHAN ASHRAM ( Shyamnagar, North 24 Parganas, WB )

শ্যামনগরে শ্রী শ্রী বিজয়কৃষ্ণ সাধন আশ্রমের ইতিহাস 

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর 24 পরগনার কাছে শ্যামনগরে অবস্থিত অবন্তিপুর গ্রাম। নতুনগ্রাম নামে এর পরিচিতি এখানে নির্জন প্রান্তরে গড়ে উঠেছে নবনির্মিত আশ্রম । আশ্রমের প্রাণপুরুষ শ্রীশ্রী বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী, প্রতিষ্ঠাতা শ্রীমৎ পরমানন্দ সরস্বতী মহারাজ । এই স্থানের একটি ইতিহাস রয়েছে যা স্থানীয় মানুষের কাছে আজও জনশ্রুতি হয়ে রয়েছে । বহু বৎসর পূর্বে জনবিরল এই স্থানে একজন সাধু আসেন এবং তিনি ভবিষ্যৎবাণী করেন যে এই স্থান তীর্থস্থানে স্থানে পরিণত হবে। এর প্রায় এক যুগ পরে  1969 সালে শ্রীমৎ পরমানন্দ সরস্বতী মহারাজ জন্মাষ্টমী তিথিতে এই গ্রামে একজন শিষ্য গৃহে রাইহরন সূত্রধরের  বাড়িতে আসেন । এখানে তিনি কয়েকদিন অবস্থান করেছিলেন । বর্তমানে নির্মিত আশ্রমের পুষ্করিণীর কাছে শিষ্য কানুবাবুকে বলেন আমি দেখতে পাচ্ছি এখানে অবন্তীপুরে গোস্বামী প্রভু কিছু একটা করবেন । রাইহরণ 

বাবুর বাড়িতে কেন্দ্র করে গোঁসাইজীর মন্দিরও আশ্রম হবে এই শ্যামনগরে। এ আমার কথা নয় , স্বয়ং গোঁসাইজীর ইঙ্গিত । এই বলে তিনি ঊর্ধ্ব আকাশে হাত তুলে ইঙ্গিত করলেন। এরপর 1972 সালে শ্রী শ্রী ঠাকুরজী শ্রী শ্রী বিজয়কৃষ্ণ সাধন আশ্রমের জন্য এই স্থানে 17 বিঘা জমি কেনেন  । সেই সময় তিনি সেখানে নামব্রহ্ম প্রতিষ্ঠা করেন। নির্মিত হয় স্বল্প আয়তনের ভজন কুটির । উক্তস্থানটি অতি উত্তম ও ভজন অনুকূল। এখানকার মনোরম পরিবেশে পূর্বদিকে তৈরি হয় এই আশ্রম। আশ্রমের সন্নিকটে গড়ে ওঠে পরমানন্দ বিদ্যাপীঠ নামক এক স্কুল।

6 ফেব্রুয়ারি 2019 সালে শ্রী শ্রী বিজয়কৃষ্ণ সাধন আশ্রমের পূর্ণাঙ্গরূপটি গড়ে ওঠে  ও সেই দিন আশ্রম প্রতিষ্ঠা দিবস ।  শ্যামল বৃক্ষরাজিতে পূর্ণ এই নির্জন ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ আশ্রমের যে নির্মাণ  সম্ভব হল  তা স্বয়ং শ্রীমৎ পরমানন্দ সরস্বতী মহারাজের অন্তর্নিহিত প্রেরনার ফলস্বরূপ । যুগে যুগে নির্জনে ভগবান তার প্রেমের দুতকে দিয়েই এভাবেই সম্পন্ন করেন কালের প্রয়োজনীয় পাথেয়। আজ এখানে যে আশ্রমটি গড়ে উঠলো তার অভিপ্রায় আমাদের অজানা থাকলেও যিনি প্রত্যেক জীবের মনের গভীরে আছেন , তাঁর কোনো কিছুই অজানা নয় । শ্রী শ্রী ঠাকুর পরমানন্দ চেয়ে ছিলেন পৃথিবীটা স্বর্গ হয়ে যাক । দিব্য জীবন লাভ করে মানুষ হোক বিধাতার কন্ঠহার । তিনি চেয়েছিলেন কিছু মানুষ তৈরি হোক, যারা সনাতন ভাবধারা প্রতিষ্ঠা করতে এগিয়ে আসবেন এই দেবভূমিতে। সেই আদর্শের বাস্তবায়ন ঘটাতে কামাখ্যা, নরেন্দ্রপুর, দুর্গানগরে স্থাপিত হয়েছিল শ্রী শ্রী বিজয়কৃষ্ণ সাধন আশ্রম । অবশেষে 23 শে মাঘ 1425 বঙ্গাব্দে শ্যামনগরে গড়ে উঠলো শ্রী শ্রী বিজয়কৃষ্ণ সাধন আশ্রম এর পূর্ণরূপটি । তিনি যে অলক্ষ্যে থেকে সবকিছু চালনা করে এই বৃহৎ কর্মকাণ্ডের রূপদান করলেন, সেই সম্পর্কে একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করছি । এই বৃহৎ আশ্রম নির্মাণ করার পূর্বে বহু পরিকল্পনা নেয়া হয় মূল নাটমন্দিরের স্থান কোন দিকে হবে? অথচ কোনোভাবেই তা মনোনীত হয় না । শ্রীযুক্ত অসীম সরকার মহাশয় সেই চিন্তায় নিদ্রাহারা ও চিন্তামগ্ন হয়ে পড়লেন । এই বৃহৎ পরিকল্পনা কিভাবে তিনি বাস্তবায়ন করবেন তার মুল সূত্রপাতের স্থানটি কোনোভাবেই যেন ঠিক করা যাচ্ছিল না। একদিন রাতে তিনি গভীর নিদ্রামগ্ন। স্বপ্ন দেখছেন শ্রীশ্রী ঠাকুরজীর সাথে তিনি শ্যামসায়রের (আশ্রমের পুষ্করিণী) পাশ দিয়ে হেঁটে চলেছেন। তিনি ঠাকুর কে জিজ্ঞাসা করে ওঠেন ‘ঠাকুর’! কিভাবে কোথায় এই আশ্রমের মূল নাটমন্দির টি স্থাপিত হবে? ঠাকুর কোন কথার উত্তর দিলেন না । তিনি পুনরায় ঠাকুরকে বললেন মূল মন্দিরের আকৃতি কি নরেন্দ্রপুর আশ্রমের অনুরূপ নির্মিত হবে? এরপর তিনি পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখেন মন্দিরটি নির্মিত অবস্থায় দণ্ডায়মান । শ্যামসায়রের জলে  পূর্ণাঙ্গ মন্দিরের প্রতিচ্ছবি পড়েছে । তাঁর ঘুম ভেঙে গেল । জাগ্রত হয়ে সময় নষ্ট না করে তিনি শ্যামনগরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এবং সেই মতো নির্মাণ কর্ম শুরু হয় । এই অনুপ্রেরণাতেই  অসীম বাবু  আশ্রম নির্মাণের কাজ শুরু করেন । 

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন পূর্বে শ্রী শ্রী ঠাকুরজি এই মন্দির নির্মাণ সম্পর্কে বলেছিলেন শ্যাম সায়য়ের জলে মন্দিরের প্রতিচ্ছবি দেখা যাবে এবং সেই মতো আজ আশ্রম টি শোভাপ্রাপ্ত হয়েছে ।