SRI SRI BIJOY KRISHNA SADHAN ASHRAM ( Narendrapur, Kolkata, West Bengal )

শ্রী শ্রী বিজয়কৃষ্ণ সাধন আশ্রম (নরেন্দ্রপুর )

ইংরেজি 1957 সালের নভেম্বর মাসে পরমারাধ্য গুরুদেব শ্রীমৎ স্বামী পরমানন্দ সরস্বতী মহারাজ শ্রীযুক্ত তারিণীচরণ চৌধুরীর মহাশয়ের 25/6 রুস্তমজী স্ট্রিটের বাড়িতে  অবস্থান করছিলেন । প্রতিদিনের সান্ধ্য কীর্তনে বহু ভক্ত সেখানে সমাগম হত । আনন্দের হাট বসে যেত সেখানে । সর্বজনপ্রিয় গুরুভ্রাতা সুশান্ত মিত্রের সুমধুর কীর্তনে শ্রীঠাকুরের অবিশ্রান্ত প্রেমাশ্রু বয়ে যেত, এক  অনির্বচনীয় আনন্দের স্রোতে সকলে অবগাহন করত । শুধু কলকাতাবাসী নয় দেশ দেশান্তর থেকে বহু আধ্যাত্ম পিপাসুদের এই সর্বত্যাগী শক্তিধর সন্ন্যাসীর সন্নিকটে উপস্থিত হতে দেখা যেত এবং আধ্যাত্ম জীবনের পথ প্রদর্শক রূপে কত মুমূর্ষু  মানুষ তাঁর কৃপাধন্য হয়েছেন।ইতিমধ্যে শ্রীপরমানন্দের আশ্রম কথা গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে। এখানে সেই গ্রন্থ তিনি পাঠ করে শোনাতেন । দিনরাত চলত নামকীর্তন।  এইভাবে কয়েক মাস অতিবাহিত হবার পর ভক্তের সমাগম আরো বাড়তে লাগলো । বহু ভক্তজনের সাধন হলো ওই বাড়িতে  । কলকাতায় বহু মানুষের সমাগমে স্থানাভাব বশত আশ্রমের প্রয়োজনীয়তা শ্রী শ্রী ঠাকুর বিশেষভাবে  অনুভব করেন। তিনি তাঁর বিপুল সাধন ঐশ্বর্যকে এমন স্বচ্ছন্দ ও মধুর ভঙ্গিমায় বহন করে নিয়ে চলতেন যে তাঁকে কে চেনা সাধারণের পক্ষে সম্ভব ছিল না। কলকাতায় আশ্রম করার প্রয়োজন । দরকার জমি । বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর আসতে লাগল । কিন্তু কোনো জমি মন মত হয়না। সেই সময় ঠাকুর দক্ষিণ দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করে বললেন আপনারা ঐদিকে খুঁজুন । এর কয়েক মাস বাদে শ্রী সুব্রত ব্রহ্মচারী বর্তমান নরেন্দ্রপুর আশ্রমের জমির খবর নিয়ে এলেন। শ্রী শ্রী ঠাকুরজী কালবিলম্ব না করে কয়েকজন কে সঙ্গে নিয়ে সত্বর একটি শুভ দিন দেখে গেলেন ওই জমি দেখতে। জমি পছন্দ হবার পর অর্থের প্রয়োজন দেখা দিল । কয়েক দিনের মধ্যে দুজন গুরুভ্রাতার আন্তরিক সহযোগিতায় আশ্রম এর টাকা সংগৃহীত হল এবং নরেন্দ্রপুর আশ্রম এর প্রথম পর্বের দলিল সম্পাদিত হল ।

আশ্রম এর জন্য নির্দিষ্ট স্থানটি কলিকাতার দক্ষিনে 24 পরগনা জেলার অন্তর্গত এবং নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের উত্তরে ও কামালগাজি দরগার পূর্বে । কিংবদন্তি আছে বহুকাল পূর্বে আশ্রমের জমির উপর দিয়ে গঙ্গা নদী প্রবাহিত ছিল । এই গঙ্গা নদীর পাড় দিয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভু পদব্রজে শ্রীক্ষেত্রে গিয়েছিলেন এবং আশ্রমের এই জায়গায় বিশ্রাম করেছিলেন । যিনি সকল যন্ত্রণা উদ্বেগ থেকে চিরমুক্ত এবং ভগবানের সঙ্গে নিত্য যুক্ত ; তাঁর সকল ইচ্ছার দায়িত্ব ভগবানই গ্রহণ করে থাকেন । কয়েকদিনের মধ্যে সংগৃহীত হল অর্থ ও শুরু হল আশ্রম নির্মাণের কাজ। গড়ে উঠলো কলকাতার উপকণ্ঠে শ্রীশ্রী বিজয়কৃষ্ণ সাধন আশ্রম। আশ্রমে একে একে গড়ে উঠলো গ্রন্থাগার অতিথিশালা ভজন কুটির এবং মূল নাটমন্দির । নদী প্রবাহ বয়ে যায় সাগরের অভিমুখে। মহাজীবনের ধারা মিশে যায় অনন্তের পথে অসীমের অভিসারে।  ইংরেজি 1991 সালের 21 শে জানুয়ারি শ্রীশ্রী ঠাকুরের পরিকল্পিত শ্রীমন্দিরের  প্রতিষ্ঠা সম্পন্ন হয় ।