SRI SRI BIJOY KRISHNA SADHAN ASHRAM (Kamakhya, Guwahati, Assam)

কামাখ্যায় শ্রী শ্রী বিজয়কৃষ্ণ সাধন আশ্রম” নির্মাণের ইতিহাস

শ্রীশ্রী গোস্বামী প্রভুর কাছ থেকে সাধন দেবার দিব্যাদেশ প্রাপ্ত হবার পর ঠাকুর শ্রীপরমানন্দের কথায় এমনি করে সমাজের বিভিন্ন অবস্থার লোকের বাড়ি বাড়ি নিয়ে যেতে লাগলেন আমাকে, আর ছড়াতে লাগলেন তাঁর আলো তাঁর অমৃত ।

সেইসময় শ্রীশ্রী পরমানন্দজী দীর্ঘকাল কামাখ্যা পাহাড়ে  উমাচল আশ্রমের কাছে একটি ছোট্ট কুটিরে নির্জন বাস করতেন। জঙ্গলাকীর্ণ শ্বাপদ ও হিংস্র জন্তু  পরিপূর্ণ সেই স্থান অদ্ভুত প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর । সেখানে বৈকালী মেঘের সোনা , ব্রম্মপুত্রের অজানা চরের দিকে উড়ে যাওয়া পাখি, কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ— সবমিলিয়ে মহাপ্রকৃতি মাতা ভগবতীর প্রাণক্ষেত্র । এক অপূর্ব অপার্থিব শান্তি বিচরণ করে সেখানে । এই নীল পর্বতে যুগ-যুগান্ত ধরে কত সাধক সাধনায় সিদ্ধকাম হয়েছেন । একদিন শ্রীশ্রী পরমানন্দজির তীর্থ গুরু শ্রীমদ বরদাকান্ত শর্মা কামাখ্যা পাহাড়ে ইচ্ছামত একটি স্থান তাঁকে বেছে নিতে বললেন। এ যেন মহাকালের অমোঘ সত্যের এক প্রকাশ । শ্রী শ্রী ঠাকুরের কথায় “অচিরে একটি আশ্রম গড়ে উঠবে সে কথা আমাদের অজ্ঞাত থাকলেও যাঁর অগোচর কিছু নেই তিনি আদিতেই একটি অতিবড় প্রয়োজন র অভাব মিটিয়ে রাখলেন ।” এই গহন নির্জন স্থানে প্রথমে একটি বাঁশের কুটির তৈরি হয়  শ্রী শ্রী ঠাকুরজির নির্জন বাসের জন্য । কামাখ্যায় আশ্রম গড়ে ওঠার বছর কুড়ি আগে একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন সুলতা বাগচী। তিনি দেখেছিলেন শ্রীশ্রী পরমানন্দ সন্ন্যাসী , একটি পাহাড়ে আছেন — তাঁর সাথে অনেক সাধু ব্রহ্মচারী আছেন। ….. একটি পাহাড়ে আশ্রম হবে, সেখানে বহু লোক থাকবেন, জীবন গঠন করবেন , বিধাতার এই অভিপ্রায় বহু পূর্বেই তিনি স্বপ্নে তা জানিয়ে  রেখেছিলেন । 

একদিন তীর্থ গুরু শ্রীযুক্ত বরদাকান্ত শর্মা মহোদয় ঐ কুটিরটিতে কাউকে এসে থাকার জন্য বিশেষ করে বললেন , নতুবা অন্য কেউ কুটিরটি দখল করে বসবে । তিনি এখানে স্থায়ীভাবে একটি আশ্রম করার জন্য বলতে লাগলেন বার-বার । অন্যেরা তাঁর ইচ্ছার প্রতিধ্বনী করল । তাঁরাও এখানে একটি আশ্রম করার দাবি জানাতে লাগল। 

অবশেষে তীব্র শীতের প্রহার ও গ্রীষ্মের অত্যাচার অতিক্রম করে বাংলা ১৩৬৬ সালের ৪ঠা মাঘ সোমবার রাত্রি আটটার সময় মহম্মদ হালিম মিস্ত্রির সহযোগিতায় দুটি কুটিরের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয় । এরপর ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে এই আশ্রম , তা এক ইতিহাস । ইংরেজী 1962 সালের জুলাই, সপ্তমী তিথিতে নির্ধারিত হল শ্রী শ্রী বিজয়কৃষ্ণ সাধন আশ্রম (কামাখ্যা)  প্রতিষ্ঠা দিবস । অনেকেই আষাঢ় মাসে বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করেছিলেন, কিন্তু ঠাকুরজী অভয়বাণীতে ঘোষণা করলেন, ” সমস্ত পৃথিবী যদি রসাতলে যায় তবু আশ্রমের প্রতিষ্ঠা উৎসবের তিনটি দিন ( সপ্তমী অষ্টমী নবমী ) কামাখ্যা পাহাড়ে বৃষ্টিপাত হবে না ।” গোস্বামী প্রভু কত লোকের মনে প্রেরণা যুগিয়েছেন আশ্রম নির্মাণের আর্থিক অনুদান । আশ্রমের রূপটি যাতে পবিত্র প্রসন্ন হয় সেদিকে পরমানন্দজীর ছিল বিশেষ দৃষ্টি । এখানে এসে মানুষ পাবে শান্তি , আনন্দ ও গোঁসাইজীর  জীবন ও বাণীর সঙ্গে পরিচিত হয়ে জীবনের অমৃত আহরণ করে নিয়ে যাবে এই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য । আশ্রম প্রস্তুত হলে আশ্রমের নাম কী হবে সেই প্রশ্ন দেখা দেয় অবশেষে । মামণি’ গোস্বামী প্রভুর নির্দেশমতো নামটি নির্বাচন করে পাঠালেন । আশ্রমের নাম হয় শ্রী শ্রী বিজয়কৃষ্ণ সাধন আশ্রম ।

সাল বাংলা 1293 । গোস্বামী প্রভু কাকিনা হয়ে স্বশিষ্যে  কামাখ্যা দর্শন করতে আসেন। সাথে শ্রী শ্রী মাতা যোগমায়া  ছিলেন । এই স্থানে এসে কামাখ্যা পাহাড়ের শোভায় তাঁর চিত্ত গভীর ভাবাবেশে মগ্ন হয় । একদিন চন্দ্রগ্রহণের রাতে  শিষ্য কুলদানন্দকে তিনি বলেন একটা পাহাড়ে এক সময়ে আমাদের সকলকে মিলিত হতে হবে। গুরুজি আমাদের ভিন্ন ভিন্ন কাজে সাধনার্থে এক একটি দল করে সংসারে প্রেরণ করবেন। শ্রী শ্রী বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর মুখনিঃসৃত এই বাণীর প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটেছে তার অপ্রকট হবার পর । শ্রীমৎ স্বামী পরমানন্দ সরস্বতী মহারাজ শ্রীশ্রী গোঁসাইজীর দিব্য প্রেরনায় এখানে নির্মাণ করেছেন শ্রী শ্রী বিজয়কৃষ্ণ সাধন আশ্রম । এখানে একটি আশ্রম গড়ে উঠুক , এ ছিল গোঁসাইজীর ইচ্ছা এবং এই আশ্রম নির্মাণের  মধ্যে দিয়ে তার এই ইচ্ছার প্রকাশ ঘটল ।

কামাখ্যা শ্রী শ্রী বিজয়কৃষ্ণ সাধন আশ্রম প্রতিষ্ঠার পর প্রতিবছর শারদীয়া দুর্গাপূজা আশ্রমে পূজা, পাঠ, হোম, কীর্তন , কুমারী পূজা, সাধু সেবা, বৃক্ষ দান, ব্রাহ্মণ ভোজন প্রভৃতি মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের সমন্বয়ে স্বর্গীয় পরিবেশের সৃষ্টি হতো। ভোরবেলায় আরতী,  স্তোত্র, কীর্তনের সময় মনে হতো মর্তে যেন বৈকুণ্ঠ নেমে এসেছে।